only for Bengali readers. (not an update)

Modern lovestory...

তাহলে দেখা কি করা যায়না একদিন? মেসেজ টা লিখতে লিখেত হাত কেপে উঠলো। বুক ধুক ধুক করে উঠলো।

তারপরই তিনটি বিন্দুর উদয় হলো। মানে দেখে নিয়েছে। কিছু লিখছে। আমি অপেক্ষা করছি। বুকের ভেতর হৃদপিন্ডটা লাফিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। বাংলা সিরিয়াল হলে এতক্ষণে ব্যাকগ্রাউন্ডে ধুক ধুক মিউজিক চলতো। এক শতবর্ষের মত অপেক্ষার পর আবার ফোনের স্ক্রিন টা জ্বলে উঠলো।

হুমম!

তোমার বার্থডেতে দেখা করতে পারি।

সেদিন সবুজ জামা পড়ো তাহলে।

আমার হৃদপিণ্ড এবার বুক থেকে বেরিয়ে ঠিক আমার হাতে এসে পড়ল। হ্যাঁ দেখা করবে? বিছানাতে শুয়ে শুয়েই দুটো দিকবাজি খেয়ে নিয়ে রিপ্লাই করলাম।

না প্ল্যান আছে।

তবে তুমি যদি প্রমিশ করো তাহলে ক্যান্সেল করতে পারি।

না থাক দরকার নেই। আমার জন্য প্ল্যান ক্যান্সেল করতে হবে না।

তবে আমার প্লানগুলো যে অস্তিত্বহীন  তা বোঝাই কি করে, যাইহোক এখন আমাকে ম্যানেজ করতে তো হবেই। আমি ভাবলাম।

আগে প্রমিস করো আসবে তাহলে সব প্ল্যান ক্যান্সেল করব। বলে দিলাম।

না থাক এখন প্রোমিশ করতে পারছিনা।

আমার বার্থডে তো দু মাস পরে। এখনো দু মাস অপেক্ষা করতে হবে?

হ্যাঁ। তবে একটা কাজ করা যায়। যাতে এই অপেক্ষাটা আরও মজাদার হবে।

হুমম বলো।

যদি এই দু মাস আমরা আর কথা না বলি। তাহলে এই অপেক্ষাটা আরও মজাদার হবে।

হাঃ! কি বলছ!

তাহলে করা যাক?

Wait wait wait। তুমি আমাকে প্রমিসও করলে না আর কথা বলবে না? আগে প্রমীশ করো!

মি রেগেই রিপ্লাই দিলাম ।

বাচ্চাদের মত করো না। বাই!

ব্যাস অমনি ব্লক করে দিল। কোথায় দেখা করব কখন দেখা করব কিছুই বলল না। কোনকিছুই ঠিক মত বলে গেলে না।

আসলে আমাদের সম্পর্কটাই এরকম। একমাস আগে তোমার লেখা গল্পঃ পড়ে খুব ভালো লেগেছিল। সেদিন তোমাকে মেসেজ করেছিলাম। তার পর যে কবে এত কথা বলা হয়ে গেলো মনে নেই। তুমি আমার ব্যাপারে সব জানো। আমার নাম, আমার পছন্দ অপছন্দ, আমার ছোটবেলা। সব আর আমি খালি তোমার নামটুকুই জানি। না ডাকনাম। তোমার বয়স, তোমার প্রিয় রং, এ গুলোও জানি। তবে কারোর সাথে দেখা হলে আগে যে জিনিস গুলো বলতে হয় তার কিছুই বলনি আমায়। নাম ,ঠিকানা, ফোন নাম্বার। এমনকি একটা ছবিও দেওনি। তাই এখন দু মাস অপেক্ষা করতে হবে।তোমাকে দেখতে বা কথা বলতে। সত্যি জানি না কিভাবে অপেক্ষা করব এত দিন। কিভাবে শুরু হলো এই সব ভাবতে শুরু করলাম। সেই দিন প্রথম কথা বলেছিলে। একটা মেসেজ। সকাল থেকে রাত হয়ে গেলো কথা বলতে বলতে। আমিও কথা বলতাম। একদিন বলে কল করব। আমার বুক কেঁপে উঠলো। ভয়ে নয়, উত্তেজনায়। আমি একটু ভেবে হ্যাঁ করে দিলাম। আর কিছুক্ষণ পরেই আমার ফোন বেজে উঠল। তারপর আর কি। রোজ কল করতে। তবে ফোনে নয়। অনলাইনে। আমি তোমার আওয়াজ টাও চিনে গেছি। এখন হয়তো তোমার মুখ না দেখলেও তোমার আওয়াজ শুনে আমি তোমায় চিনে নিতে পারবো। তবে তোমাকে দেখতে কেমন টা জানতে খুব ইচ্ছে করে। তোমার ভয় দুঃখ, মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা সব কথাই আমাকে বলেছ। তবে তোমার ছবি বা নাম কোনোটাই বলনি। আমি অনেক বার চেয়েছি তবে কিছু বলনি। শেষ দিনেও আমি ছবি চেয়েছিলাম। বললে ভাবছি। তারপর তুমি আর দিলে না। কি করবো আমি রাগ করতেও পারিনা তোমার ওপরে। কি বলবে বলত এই সম্পর্কটাকে। সব সম্পর্কের যে নাম থাকবে তার তো মানে নেই।

সত্যি বলতে তোমার স্টুডেন্ট গুলো, তোমার বাড়ির পাশের লোকগুলো, এমনকি তোমার বাড়ির যে কাজের লোক আছে তার ওপরেও খুব হিংসে হয় আমার। অন্তত তারা জানে তুমি কেমন দেখতে। আর যে তোমার মনটাকে জানে সে এখনও নিজের কল্পনাকে ব্যবহার করেই তোমার সাথে স্বপ্নে দেখা করে। এই যে কৌতূহল তৈরি করেছো এটাতেই আরও আকৃষ্ট হচ্ছি তোমার প্রতি। রোজ রোজ একটু একটু করে কোন গহিন বনে ঢুকে যাচ্ছি বুজতে পারছিনা। শেষে বাঘ পাবো না রাজ কন্যা কেউ জানে না।

মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়। আজকাল যা সব চলছে। তুমি আসল না স্বপ্ন সেটাও বুঝতে পারিনা। হয়তো এইবার জন্মদিনে জানতে পরবো। অথবা না। কোথায় দেখা করব তাও বলনি। তাহলে কোথায় যাবো।

দেখতে দেখতে দু মাস কেটে গেছে। কাল আমার জন্মদিন। আমি অপেক্ষা করে বসে আছি যে এই বুঝি ফোনে মেসেজ ঢুকবে। কাল এই সময় এই স্থানে এসো।

তবে আমি চিনব কিভাবে? আমার মনে যেই আকার তোমায় দিয়েছি সেটার সাথ কতটা মিল থাকবে তোমার?

তোমার প্রোফাইল নাম টা খুব অদ্ভুত।

"IthinkthereforeIam"

এটার মানে কি। পরে জানলাম এটার কতটা গভীর মানে। এখন আর তুমি স্বপ্ন না সত্যি সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তুমি আছো তারই প্রমাণ এটা।

রাত কেটে গেলো। আমি বেশি রাত জাগিনা। তবে কাল জেগে ছিলাম। না কোনো মেসেজ এলো না তোমার। এখনো ব্লক অবস্থাতেই আছি। তবে বন্ধুরা আর আত্মীয়রা মেসেজ করলো। তবে তা নিয়ে যেন কোনো মাথা ব্যথাই নেই আমার।

সকালে প্রতেকবারের মতো মায়ের হাতের পায়েস খেয়ে, গঙ্গায় স্নান করে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে গেলাম। দুপুরে কাউকে কিচ্ছুনা বলেই সবুজ জামা পড়ে চুল খোলারেখে, একটু সেজে বেরিয়ে পড়লাম। তবে মা ধরে নিলো। আমি বললাম বন্ধুরা সারপ্রাইজ দেবে বলে ডেকেছে। মা আর আটকালোনা ।

আমি জানিনা তোমায় কোথায় খুজবো। একবার দেখা করার কথা উঠলো আর ঐভাবেই ছেড়ে দিলে। এখন তুমি সামনে থাকলে চিনতেও পারবো না। তুমি হয়তো চিনে নেবে। তবে তার জন্য আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে। নাকি ভুলেই গেলে।

কোথায় যাব ভেবে ভেবে বাসে উঠে পড়লাম। বাস থেকে নামলাম ঠিক শ্যামবাজারে। তারপর সোজা রাস্তা ধরে চলে গেলাম আমার প্রিয় জায়গায়। যেটা নিয়ে কথা বলে বলে একদিন তোমার মাথা খেয়ে নিয়েছি। বাগবাজারে মায়ের ঘাট। আমার খুব প্রিয় জায়গা। আর পুরো কলকাতায় এই একটাই জায়গায় কথা আমি ভাবতে পারি যেখানে আমরা দেখা করতে পারি। অন্তত আমার স্বপ্নে আমরা এখানেই দেখা করেছি।

এসে বসে পড়লাম একটা জায়গা দেখে। শ্যামবাজার দিয়ে সোজা রাস্তা ধরে এলে যেই ঘাট টা পড়ে ওটা নয়। তার পাশের টা। বাগবাজার

প্লাটফর্মটা পার করে। মায়ের ঘাটের গেট দিয়ে ঢুকে রেললাইন পার করে সোজা দুটো সাদা বিশ্রাম ঘর আছে তাদের মাঝে যে সিঁড়ি নেমে যাচ্ছে নিচে গঙ্গায় সেখানে। বিশ্রাম ঘর গুলোতে এখন শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান হচ্ছে । তারপাশে একটু জায়গা আছে বট গাছের নিচে যেখানে নাপিত একজনের মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছে। তার উল্টো দিকেই ট্রেন এসে দাড়ালো। তারপরই প্লাটফর্ম শুরু। বাগবাজার স্টেশন। চক্ররেল বলে এটাকে। কেনো বলে আমিও জানিনা। তখনও রোদ জমপেশ। বেলা তিনটার মিষ্টি রোদ। আমি সেই রোদে বসে আছি। সাদা প্যান্টটা যে ধুলোয় নোংরা হচ্ছে তার খেয়াল নেই। আমি এদিক ওদিক তোমার দেওয়া ডেসক্রিপশন এর লোক খুজছি।

আমার বুক তখন ধুক বুক করছে। অনিশ্চয়তায় ভুগছি। আসবে কিনা? ভুলে গেছো বোধ হয়। আচ্ছা দু মাস অপেক্ষা করেছি আর কিছুক্ষণ তো করাই যায়। এখনো তোমার গলা আমার কানে ভাসছে। এই হয়তো শুনতে পাবো baby I missed you!

উত্তেজনায় আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। আমি এদিক ওদিক করতে থাকলাম। এই এক্ষুনি। এই এক্ষুনি। তুমি পেছনে দিয়ে এসে আমার জীবনের বেস্ট সারপ্রাইজ দেবে আমাকে। আমার জন্মদিনে আমি অবশ্য গিফট নিয়ে এসেছি। একটা গোলাপ ফুল সাদা গোলাপ, এখনও আমাদের সম্পর্কের স্ট্যাটাস আমার কাছে পরিষ্কার নয়। আমাকে ভালোবাসো একথা কোনোদিন বলনি। আমিও স্বীকার করিনি। আমরা যে শুধু বন্ধু নয় একথাও আমি বলতে পারি। আর সঙ্গে একটা চকলেট।

গঙ্গা নদীর জলের সাথে সময়ও ভেসে যেতে লাগলো। এখন চারটে বাজে। আমার উৎসাহ উত্তেজনা হতাশায় পরিণত হলো। না আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবোনা। বেশি দেরি হলে বাড়িতে বকবে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই পারি। কানে হেডফোনটা এবার গুজলাম আর তোমার প্রিয়গান চালিয়ে দিলাম। যদিও খুব দুঃখের। তবে এই মহূর্তের জন্য উপযুক্ত। আসে পাশে কত লোক এলো আর গেলো। আমার ছবিই তোমার কাছে আছে তো? নাকি সবই ডিলেট করে দিয়েছ? নাকি আলালে থেকে আমি কষ্ট দিচ্ছ? আমি যদি তোমায় না দেখি তুমি ডাকবে তো ? এই সব প্রশ্ন মাথায় ঘোড়া ফেরা করতে লাগলো।

একটা গান শেষ হলো অন্য একটা গান এলো। আর একটা গেলো। সময়ও কাটতে লাগলো। আমি যে কোন প্রত্যাশায় এসেছিলাম জানিনা। তুমি কোনো প্রমিজ করো নি। আজ আসবে তাও বলনি। কোনো সময়ও বলনি। আর এখানে আমি আসবো টাও জানতে না। তাহলে তোমার দোষ কিভাবে দেবো?

সূর্য এখন অস্ত যাচ্ছে। তখন হয়তো পাঁচটা বেজে গেছে। আমি আর সময় দেখার চেষ্টা করিনি।পশ্চিম আকাশে সূর্য গাছেদের পিছনে ডুব দিচ্ছে। আর আমার আশাও তার সাথে ডুব দিয়েছে। হতাশাটেও প্রত্যাশা নিয়ে আমি আর একটু এইবলে বসে থাকলাম। গঙ্গার জল ধীরে ধীরে কালো হতে লাগলো। আশেপাশে শরতের পূর্বের সন্ধ্যার বাতাস বইতে লাগলো।অন্ধকার গ্রাস করলো বাগবাজার ঘাটকে। স্ট্রীট লাইট জ্বলে উঠলো। একটি লাইট ঠিক আমার মাথার ওপর আলো ফেলে আমার সবুজ কুর্তীকে আরও দৃষ্টিগোচর করে তুলল। চারিদিকে কোলাহলের মধ্যেও খালি আমার কানে তোমার কোথায় ভেসে আসছে!

Beby I missed you! এই একটাই শব্দ পাঠিয়েছিলে যখন আমি রাগ করেছিলাম।

Baby I missed you!

Beby I missed you!

ইতিমধ্যেই আমার চোখ থেকে জল পড়তে শুরু হয়ে গেছে যা আমি সানগ্লাস দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেছি। এবার হাটু দুটোকে বুকের কাছে টেনে চোখ বুজে ঠান্ডা বাতাসটাতে আমার ওপর দিয়ে ভালোভাবে বয়ে যেতে দিলাম।

Baby I missed you!

না এবার আর মনের ভুল নয়। কেউ আমাকে ঠিক পেছনে থেকে ডাকলো।

আমি হেডফোনটা কানে থেকে খুলে পেছনে তাকালাম। অন্ধকারে একটা একটা প্রতিকৃতি তৈরি হচ্ছে। সত্যিই কি আমার স্বপ্নটা আকৃতি ধারণ করছে। সেই আকৃতি একটু একটু করে আলোর মধ্যে বেরিয়ে আসছে। সময় যেন থেমে গেছে যেই ঠান্ডা বাতাস আমাকে কাঁদাচ্ছিল, এখন আমার চুল উড়িয়ে আমার কেঁদো কেঁদো মুখটাকে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। আমি উঠে গেলাম দুটো সিঁড়ি বেয়ে। তোমার দিকে।

এতদিনের অপেক্ষার তাহলে অন্ত হলো?
_

( By the way this is my favourite place too. Let's meet here. 😉)
_______________________________________
I wrote this story for a facebook but। They ended up selecting another story of mine, I couldn't just let this story go to waste.

Comment